উখিয়া নিউজ ডটকম
প্রকাশিত: ২২/১০/২০২৪ ৭:০৯ পিএম

আমরা বাঙালি নতুন ইস্যু পেলে দৌড়ে তা দেখার জন্য উৎকণ্ঠা প্রকাশ করি। আজ বয়কট নিয়ে পাঠকদের জন্য ভিন্ন কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করছি—

আরো পড়ুন :: দূষণের দোষী কারা!

 

বয়কট হলো সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিকভাবে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা দেশের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা বা তাদের পণ্য, পরিষেবা বা কার্যক্রম এড়িয়ে চলা। বয়কটের মাধ্যমে সাধারণত অন্যায় বা অনৈতিক কোনো কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়। কিন্তু, অনেক সময় আমরা নিজেদের জীবনে এক ধরনের দ্বৈত আচরণ করি—যা সত্যিকার বয়কট নয়, বরং ভণ্ডামি। একটু আশপাশের পরিবেশের দিকে তাকিয়ে বলি–

যেমন, আমরা হয়তো মুখে বয়কটের কথা বলি, অন্যকে উৎসাহিত করি তা মেনে চলতে। কিন্তু, নিজেরাই গোপনে সেই পণ্য বা কাজকে গ্রহণ করি। এটি শুধু একজনকে নয়, পুরো সমাজকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। কারণ, আমাদের কার্যকলাপ সমাজের ওপর প্রভাব ফেলে এবং অন্যরা আমাদের আচরণ দেখে নিজেদেরও অনুপ্রাণিত করে।

এই ভণ্ডামি আমাদের ব্যক্তিত্বকে নিচু করে এবং সমাজে আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে। সত্যিকার বয়কট কেবল মুখের কথা নয়, এটি একটি দায়িত্বশীল কর্ম যা আমাদের বিশ্বাস ও আদর্শের প্রতি দৃঢ়তা প্রমাণ করে। যদি আমরা অন্যদের থেকে সৎ আচরণের আশা করি, তাহলে আমাদের নিজেদেরও সেই সৎ আচরণ অনুসরণ করতে হবে। অন্যথায়, আমাদের কৃত্রিমতা এবং দ্বৈততা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আসলে আমাদের পরিবর্তন শুরু হয় নিজের মধ্যে থেকে। যদি আমরা কোনো অন্যায় বা অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাই, তাহলে আমাদের নিজেদেরই আগে সেই অন্যায় থেকে দূরে থাকতে হবে। নিজের আচরণকে শুদ্ধ না করে অন্যদের সমালোচনা করা শুধু দ্বিচারিতা এবং সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়।

বয়কটের ধারণা যেমন সামাজিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই এটি আমাদের নিজস্ব নৈতিক এবং ধর্মীয় দায়িত্বের সাথেও গভীরভাবে যুক্ত। একদিকে, আমরা হয়তো সামাজিকভাবে অনৈতিক কোনো কাজ বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মুখে বয়কটের ঘোষণা দিই, কিন্তু আমাদের গোপন আচরণ যদি তার বিপরীতে থাকে, তাহলে আমরা নিজেদেরই ক্ষতি করছি। আসলে, এটি এক ধরনের আত্মপ্রবঞ্চনা, যা দীর্ঘমেয়াদে আমাদের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে। আসুন একটু ধর্মীয় দিক দিয়ে বুঝার চেষ্টা করি–
প্রতিটি ধর্মের মূল ভিত্তি হলো সততা, ন্যায়বিচার এবং নিষ্ঠা। আমাদের ধর্মীয় অনুশাসন আমাদের শিখিয়েছে যে, বাইরে থেকে যা প্রচার করি, তার সাথে ভেতরের আচরণের মিল থাকা উচিত। ইসলাম, হিন্দু, খ্রিস্টান বা বৌদ্ধ ধর্মের যেকোনো আচার-অনুষ্ঠানই আমাদের এই মূলনীতি শেখায়। মুখে অন্যায় কাজের বিরোধিতা করে গোপনে সেই কাজ গ্রহণ করা সম্পূর্ণরূপে ধর্মের বিপরীত। প্রকৃত ধার্মিকতা হলো নিজের অন্তর ও বাহ্যিক আচরণের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা।

আরো একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়—

দ্বৈত আচরণের মাধ্যমে আমরা আমাদের আত্মসম্মানকে কমিয়ে ফেলি। আমরা যখন মুখে অন্যকে বয়কট করার পরামর্শ দিই, কিন্তু নিজেরা সেই নিয়ম মানি না, তখন আমাদের নৈতিকতার প্রতি আস্থা দুর্বল হয়। এটি শুধু আমাদের নৈতিক অবস্থানকেই দুর্বল করে না, বরং আমাদের চারপাশের মানুষের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মানুষ তখন আমাদের দ্বিচারিতাকে দেখে শিক্ষা নেয়, এবং সমাজে এই ভণ্ডামির চর্চা বৃদ্ধি পায়।

যদি আমরা ব্যক্তিগত উন্নতি ও আত্ম-জবাবদিহিতা নিয়ে বুঝতে চাই—

ধর্মের একটি মূল শিক্ষাই হলো আত্ম-জবাবদিহিতা। আমাদের প্রত্যেককে নিজের কর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। যদি আমরা অন্যকে বয়কটের কথা বলি কিন্তু নিজেরাই তা না মানি, তাহলে নিজের মনকে প্রশ্ন করা উচিত: “আমি কি প্রকৃতভাবে সৎ? আমি কি নিজের নৈতিক অবস্থানকে শক্ত করে রেখেছি?” এই আত্মমূল্যায়ন আমাদের নিজেকে আরও ভালোভাবে গড়তে সাহায্য করবে।

আরো গভীরে গিয়ে যদি পরিবর্তন শুরু নিজের থেকে এমনভাবে ভাবি তাহলে দেখা যায়—

আমরা অনেক সময় চাই যে অন্যরা বদলাবে, কিন্তু প্রকৃত পরিবর্তন তখনই আসে যখন আমরা নিজেরাই পরিবর্তন হই। আমাদের নিজেদের ধর্মীয় ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করা উচিত: “আমি কি সত্যিকারের পরিবর্তন চাই?” যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে প্রথমে নিজের আচরণ ঠিক করতে হবে।

ধর্মীয়ভাবে আমাদের প্রতিটি কাজেই সদিচ্ছা থাকা উচিত এবং তা আমাদের অন্তরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। যদি আমরা নিজেদের মনকে বিশুদ্ধ করতে পারি এবং আচার-আচরণে সৎ হই, তাহলে আমরা শুধু নিজেদের নয়, সমাজকেও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।

আমার লেখার শেষে এসে বলতে চাই—

ধর্ম, নৈতিকতা এবং সামাজিক দায়িত্বের মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। মুখে বলার আগে আমাদের নিজেদের আচরণে সততা ও আন্তরিকতা থাকা জরুরি। আসুন, আমরা আমাদের ভেতরের দ্বৈত আচরণকে পরিহার করি, আমাদের ধর্মীয় অনুশাসনের পথে থাকি, এবং সমাজকে নৈতিকভাবে উন্নত করার জন্য প্রকৃত বয়কট বা প্রতিবাদে অংশ নিই। শান্তি ফিরে আসুক সবার অন্তরে।

নতুন প্রত্যাশায়,
প্রভাষক শুভংকর বড়ুয়া
পাতাবাড়ি, উখিয়া, কক্সবাজার
তারিখ: ২২.১০.২৪ খ্রিঃ

 

প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব উখিয়া নিউজ- এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য উখিয়া নিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

 

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...